ঢাকা, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২২
সিলেট অঞ্চলের কৃষির সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে ও বিশাল পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি। তিনি বলেন, সিলেটের হাওর, টিলা ও সমতলে কৃষির সম্ভাবনা অনেক। অনেক জমিও পতিত থাকে। এসব পতিত জমিকে কীভাবে চাষের আওতায় আনা যায়, টিলাতে কীভাবে কমলা, জাম্বুরা, কফি, কাজুবাদামসহ ফলের চাষ করা যায়, সে বিষয়ে কাজ চলছে। বোরো মৌসুমে সেচসুবিধা সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যে ২২৬ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সিলেটের কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে।
আজ মঙ্গলবার সকালে সিলেট সার্কিট হাউজে সিলেট অঞ্চলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, চালের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সেজন্য, আমরা চালের উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের কৃষি জমি ক্রমশ কমছে, অন্যদিকে সমতল/ অনুকূল পরিবেশের জমির সম্ভাবনাকে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবহার করছি। এ অবস্থায়, চালের উৎপাদন বাড়াতে আমরা পাহাড়, হাওর, উপকূলসহ প্রতিকূল এলাকায় ধানের চাষ সম্প্রসারণ করতে ও পতিত জমি কাজে লাগাতে কাজ করছি। এসব এলাকা ব্যবহার করে আমরা ভবিষ্যতে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা করে, খাদ্যে উদ্বৃত্ত থাকতে চাই।
সভায় সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, সিলেট অঞ্চলের ডিএইর অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সিলেট অঞ্চলের/বিভাগের কৃষির সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে উপস্থাপনা করেন উপপরিচালক কাজী মজিবুর রহমান।
উপস্থাপনায় জানান হয়, সিলেট অঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় মোট জমির পরিমাণ ১২ লাখ ৫০ হাজার ৫৩২ হেক্টর। চাষযোগ্য বা ফসলী জমি রয়েছে ৭ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৪ হেক্টর। এর মধ্যে এক ফসলি জমিই অর্ধেক, ৪৯%। ফসলের নিবিড়তা ১৬০%, যা দেশের অন্য বিভাগের তুলনায় সবচেয়ে কম। অন্যদিকে পতিত জমি ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৯৯ হেক্টর। এ বিশাল পতিত জমিতে ফসল উৎপাদনই এখন চ্যালেঞ্জ।
জমি পতিত থাকার অন্যতম কারণ হলো অনুপস্থিত কৃষক বা মালিক। সিলেট অঞ্চলে ১৮% কৃষক ভূমিহীন ও ৩৬% প্রান্তিক। প্রবাসী কৃষকেরা চাষে আগ্রহী নয়। এছাড়া, বোরো মৌসুমে সেচের অপর্যাপ্ততা, পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আয়রণের উপস্থিতি, আগাম ও আকস্মিক বন্যা, পাহাড়ি ঢল-অতিবৃষ্টি, টেকসই ফসল রক্ষা বাঁধের অভাব, আগাম- স্বল্পমেয়াদী জাত প্রভৃতি সমস্যা রয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নাম জমা না দিলেও সার্চ কমিটিতে যে নাম এসেছে, তাতে ভাল কমিশন গঠন সম্ভব হবে। আমরা আশা করি, সার্চ কমিটি এমন যোগ্য ব্যক্তিদের নাম জমা দিবে, যেখান থেকে আমরা শক্তিশালী নির্বচান কমিশন পাব। যে কমিশন জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশে সুষ্ঠ ও সুন্দর নির্বাচন পরিচালনা করবে, যা বিশ্বে প্রশংসিত হবে।
ড. রাজ্জাক আরো বলেন, নির্বাচন বর্জন করে, আন্দোলন করে বিএনপি তাদের ক্ষতি করেছে, জাতির ক্ষতি করেছে। যে কোন বিষয়ে আলোচনা সংলাপের বিকল্প নেই। ইউক্রেন নিয়ে এতো উত্তেজনার মধ্যেও পুতিন ও বাইডেন কথা বলেছেন। আর বিএনপি সংলাপ আলোচনা বর্জন করে যাচ্ছে, যা অরাজনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক আচরণ।
পরে দুপুরে কৃষিমন্ত্রী কৃষিযন্ত্র তৈরির স্থানীয় প্রতিষ্ঠান আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ পরিদর্শন করেন। এসময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকার স্থানীয়ভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্র তৈরি হলে কৃষকেরা কম দামে যন্ত্র পাবে ও স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সেজন্য, আমরা স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে আরও সুযোগসুবিধা দিবো এবং ধীরে ধীরে কৃষিযন্ত্র আমদানি নিরুৎসাহিত করব।